Skip to content
Home » শিক্ষা ব্যবস্থা ও ক্যারিয়ার ভাবনা

শিক্ষা ব্যবস্থা ও ক্যারিয়ার ভাবনা

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৪ বর্ষ পূর্ণ হয়েছে। স্বাধীনতার পর ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হয়েছে অনেকটা অভিভাবকশূণ্যভাবে। কারণ দীর্ঘ এই পথ চলায় আমাদের কোন জাতীয় শিক্ষানীতি ছিলনা। শিক্ষানীতি নিয়ে প্রথম কাজ শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার পর পর ডঃ কুদরত ই-খুদার নেতৃত্বে। ১৯৭৫ খ্রীষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে তা স্থবির হয়ে পড়ে। ২০০৮ খ্রীষ্টাব্দে প্রণীত হয় খসড়া “শিক্ষানীতি- ২০০০”। ক্ষমতার পট পরিবর্তনে পরবর্তীতে তাও পরিত্যক্ত হয়। জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে প্রতিনিয়ত। অবশেষে ২০০৯ খ্রীষ্টাব্দে প্রথমবারের মত পূর্ণাঙ্গ আকারে প্রণীত হয় খসড়া শিক্ষানীতি যা ২০১০ খ্রীষ্টাব্দে অনুমোদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে।

কোন সু-স্পষ্ট শিক্ষানীতি না থাকায় আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থার কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও ধারাবাহিকতা ছিলনা। তাই একজন অভিভাবক যেমন, তেমনি একজন ছাত্রও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন লক্ষ্য ও পরিণতি’র ব্যাপারে অন্ধকারে থেকে চালিয়ে গিয়েছে পড়ালেখা। আর এই চালিয়ে যাওয়া ছিল মুখস্থ নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার হাত ধরে। তাই বছরের পর বছর দক্ষ জনশক্তি যে হারে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি, কারণ আকাঙ্খা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি তৈরী হয়নি, যদিওবা শিক্ষিত মানুষ তৈরী হয়েছে অনেক!

বর্তমান শিক্ষানীতির বক্তব্য হলো, “আমাদের কোনো শিক্ষার্থীর জীবনকে একটি উদ্দেশ্যহীন পথে ঠেলে দিতে পারি না। কোনো ধরনের দক্ষতা, অন্ততঃ নূন্যতম একটি পর্যায় পর্যন্ত মানসম্মত শিক্ষা লাভ না করে মাঝ পথে কোনো শিক্ষার্থীকে আমরা ঝরে পড়তে বা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলার লক্ষ্যে কেনো না কেনো পর্যায়ে একটি স্বীকৃত শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মনে রাখতে হবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের মূল্যবান সময়ের ব্যবহার যথাযথভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। আমরা চাই না কোনো শিক্ষার্থীই অকৃতকার্য হয়ে শিক্ষা জীবন থেকে হারিয়ে যাক।

পরীক্ষা পদ্ধতি বা শিক্ষার্থীর শিক্ষার মান যাচাই বা শিক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতির মৌলিক পরিবর্তন করতে হবে। এ জন্য ক্লাশরুমের শিক্ষাকে সম্পূর্ণ সফল করতে হবে। শিক্ষার্থীদের তথাকথিত নোট বই, প্রাইভেট টিউশনী প্রভৃতি অনাকাঙ্খিত আপদ থেকে মুক্তি দিতে হবে। পরীক্ষা হবে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও স্বাভাবিক পরিবেশে, পরীক্ষাকে শিক্ষার্থীরা ভীতিকর মনে করবে না, বরং আনন্দময় উৎসব হিসেবে গ্রহণ করবে। পরীক্ষাকে পরীক্ষার্থীরা তার শিক্ষা জীবনের সার্থকতার মূল্যায়ণ ও স্বীকৃতি হিসাবে আনন্দের সাথে গ্রহণ করবে। সার্বিক শিক্ষা জীবনকেই আকর্ষণীয় নিরাপদ ও আনন্দময় করে তুলতে হবে। এ রকম পরিবেশই আমাদের লক্ষ্য ও কাম্য।”

বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা কাঠামো:

আমাদের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে: সাধারণ শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা, কারিগরী/ কর্মমুখী শিক্ষা এবং পেশাগত শিক্ষা। নিম্নে এই বিষয়ে সাধারণ ধারণা প্রদান করা হলো।

১. সাধারণ শিক্ষা:

ক) প্রাথমিক শিক্ষা: ১ম-৫ম শ্রেণী; ৬-১১ বছর বয়স সীমা
খ) মাধ্যমিক শিক্ষা: ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণী: নিম্ন মাধ্যমিক; ৯ম-১০ম শ্রেণী: মাধ্যমিক ও ১১শ-১২শ শ্রেণী: উচ্চ মাধ্যমিক; মাধ্যমিক পর্যায়ে (নিম্ন মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক) মোট ০৭ বছর।
নিম্ন মাধ্যমিকের পরে অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণীতে জেএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে মূল ধারার শিক্ষা বা কারিগরী শিক্ষা বেছে নেয়া যাবে। আবার বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিক বিভাগও নির্ধারণ করা যাবে।
১১শ-১২শ শ্রেণী এখন পর্যন্ত ১০০ ভাগ স্কুলের আওতায় নেই, বিভিন্ন উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ বা ডিগ্রী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। তবে বেশ কিছু স্কুলে ২০১০ খ্রীষ্টাব্দের পরবর্তী সময়ে উচ্চ মাধ্যমিক শাখা খোলা হয়েছে ও হচ্ছে।
গ) উচ্চ শিক্ষা:
কলেজ: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত (শিক্ষা বোর্ড নয়)। কলেজ পর্যায়ে ৩ বছরের স্নাতক (পাস) কোর্সে ভর্তি হওয়া যায় অথবা ৪ বছরের স্নাতক (সম্মান) কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে Master ডিগ্রী অর্জনের সুযোগ আছে। Master ডিগ্রী অর্জনের জন্য স্নাতক (পাস) ছাত্রদের ক্ষেত্রে ২ বছর ও স্নাতক (সম্মান) ছাত্রদের ক্ষেত্রে ১ বছর সময় লাগে। মাস্টার্সের পরে একজন ছাত্র ২ বছর মেয়াদী এম.ফিল. ও ৩-৪ বছর মেয়াদী পি.এইচ.ডি. ডিগ্রী অর্জন করতে পারে। তবে এই হিসাবে সেসন জট অন্তর্ভূক্ত নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়: ব্যানবেইস এর হিসাব মতে বাংলাদেশে ৭৩ টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। যার মধ্যে ২১ টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে Public Sector এ আর ৫২ টি Private Sector এ। ২১ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯ টি হচ্ছে নিয়মিত ক্যাম্পাস সমৃদ্ধ। বাকি ২ টির মধ্যে একটি হচ্ছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, যারা মূলত Non-campus ও দূর শিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষা দান করে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ১৮ টি Formal Course ও ১৯ টি Non-formal Course পরিচালনা করছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মূলত সমগ্র বাংলাদেশের ডিগ্রী ও Masters কলেজ সমূহের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে উচ্চতর এফ.সি.পি.এস. ডিগ্রী দেয়া হয়। ১২ টি বিষয়ে Post Graduate Diploma , ১৫ টি বিষয়ে এম.ডি. ডিগ্রী ও ৮ টি বিষয়ে এম.এস. কোর্স পরিচালনা করা হয়।

২. মাদ্রাসা শিক্ষা: 

ক) এবতেদায়ী মাদ্রাসা (প্রাথমিক সমমান)
খ) দাখিল মাদ্রাসা (এসএসসি সমমান) ও আলিম মাদ্রাসা (এইচএসসি সমমান)
গ) ফাজিল মাদ্রাসা (২ বছরের কোর্স)
ঘ) কামিল মাদ্রাসা (২ বছরের কোর্স)

৩. কারিগরী-কর্মমুখী শিক্ষা: 

ক) প্রাথমিক: প্রাথমিক পর্যায়ে নেই
খ) মাধ্যমিক: নবম শ্রেণী থেকে শুরু; কারিগরী শিক্ষাবোর্ডের অধীনস্থ। টেকনিক্যাল স্কুল এণ্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাশ করে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ভর্তি হওয়া যায়।

৪. পেশাগত শিক্ষা:

পেশাগত শিক্ষার শুরুটা হয় এইচএসসি’র পরে। এই ক্ষেত্রে Leather Technology, Textile Technology, Agriculture এ ৪ বছরের ডিগ্রী অর্জন করা যায় (সম্মান সমমান)। এছাড়া মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং কলেজ, হোমিওপ্যাথিক কলেজ, আইন কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বি.বি.এ. এই বিভাগের অন্তর্ভূক্ত।
বি.এড., এম.এড., বি.পি.এড. এই শাখার অন্তর্ভূক্ত তবে এই ডিগ্রী সমূহ অর্জনের জন্য নুন্যতম স্নাতক (পাস) ডিগ্রী থাকতে হয়।

শিক্ষা কাঠামোর ছক:

এসএসসি’র পরে অনেক ছাত্র-ছাত্রীর জীবনে যা ঘটে-

 আসন স্বল্পতার কারণে ভাল কলেজে ভর্তি হতে পারেনা, লেখাপড়ার অবনতি ঘটে।
 দারিদ্রের কারণে ভাল কলেজে ভর্তি হতে পারেনা, মেধা থাকলেও সুযোগ পায়না।
 অল্প মেধার ছাত্র কলেজে ভর্তি হয়ে কষ্ট পায়, লেখাপড়া ছেড়ে দেয়।
 মূলধারায় শিক্ষা গ্রহন করে শিক্ষিত হয়ে ওঠে, প্রতিযোগিতার বাজারে চাকরী পেতে অনেক কষ্ট হয়।
 ভাল কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে পরিবার থেকে দূরে থাকে, ব্যক্তিগত জীবনের অবনতি হয়।

জীবন গঠনের জন্য কি করবো?

ক) যারা মূল ধারার শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায়: 

জিপিএ ৫.০০ প্রাপ্ত বেশীরভাগ এসএসসি পাশ ছাত্র-ছাত্রীদের লক্ষ্য থাকে ঢাকা ঢাকায় বাংলাদেশের সেরা উচ্চ মাধ্যমিক কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া। তবে ভাল ফলাফলের জন্য ঢাকায় ছোটাছুটির চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরবর্তী জীবনে ভাল করার তীব্র আকাঙ্খা। আর এই আকাঙ্খা যদি থাকে, তাহলে নিজের এলাকাতে থেকে লেখাপড়া করাটাই সমর্থনযোগ্য কারণ এতে করে পারিবারিক পরিমণ্ডলে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। দেশের প্রত্যেকটি জেলাতেই আছে যথেষ্ট সংখ্যক সরকারী ও বেসরকারী কলেজ।

খ) যারা কারিগরী শিক্ষায় জীবন গঠন করতে চায়:
ডিপ্লোমা:
সরকারী প্রতিষ্ঠানে যে’সব ডিপ্লোমা কোর্স আছে: ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা-ইন-টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা-ইন-জুট টেকনোলজি, ডিপ্লোমা-ইন-গার্মেন্টস ডিজাইন এন্ড প্যাটার্ন মেকিং টেকনোলজি, ডিপ্লোমা-ইন-এগ্রিকালচার, ডিপ্লোমা-ইন-ফিসারিজ, ডিপ্লোমা-ইন-ফরেস্ট্রি।
সরকারী প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা ভর্তির যোগ্যতা: এসএসসি/ এসএসসি (ভোক)/ দাখিল(ভোক)/ সমমান পরীক্ষায় সাধারণ গণিত বা উচ্চতর গণিতে জিপি ৩ সহ কমপক্ষে জিপিএ ৩ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ: ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জনের জন্য বাংলাদেশে ২৪ টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট রয়েছে। প্রবল প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া যায়, কারণ আসন সংখ্যার তুলনায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশী।
এছাড়াও সরকারী প্রতিষ্ঠানে ২-বৎসর মেয়াদি মেরিন ও শিপবিল্ডিং ট্রেড সার্টিফিকেট কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়, যাতে এসএসসি/ এসএসসি(ভোক)/ দাখিল(ভোক)/ দাখিল/ সমমান পরীক্ষায় সাধারণ গণিত বা উচ্চতর গণিতে জিপি ৩ সহ কমপক্ষে জিপিএ ৩ প্রাপ্ত ছাত্র/ছাত্রীরা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
আরো রয়েছে ১ বছর মেয়াদি স্কিল সার্টিফিকেট যাতে অনুমোদিত সকল বোর্ড / উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে এসএসসি পাস ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে যে’সব ডিপ্লোমা কোর্স আছে: ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা-ইন-টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা-ইন-গার্মেন্টস ডিজাইন এন্ড প্যাটার্ন মেকিং টেকনোলজি, ডিপ্লোমা-ইন-এগ্রিকালচার, ডিপ্লোমা-ইন-ফিসারিজ, ডিপ্লোমা-ইন হেল্থ টেকনোলজি এন্ড সার্ভিসেস
বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা ভর্তির যোগ্যতা: এসএসসি/ এসএসসি (ভোক)/ দাখিল(ভোক)/ এসএসসি সমমান পরীক্ষায়- বিজ্ঞান বিভাগের ক্ষেত্রে কমপক্ষে জিপিএ ২.৫ / ২য় বিভাগ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীরা অথবা বিজ্ঞান বিভাগ ব্যতীত অন্যান্য বিভাগের ক্ষেত্রে সাধারণ গণিত বা সাধারন বিজ্ঞানে জিপি ২/ ৪০% নম্বরসহ কমপক্ষে জিপিএ ২.৫/ ২য় বিভাগ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ: বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত ৫৭ টি কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে সারা দেশে। ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারীরা পড়ালেখা শেষেই চাকরীতে যোগদান করতে পারে বা বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সহ উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করতে পারে।
এইচএসসি (বি.এম.)/ ডিপ্লোমা ইন কমার্স:

অনুমোদিত সকল বোর্ড/ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে এসএসসি (বিজ্ঞান/ মানবিক/ ব্যবসায় শিক্ষা/ ভোকেশনাল), দাখিল/ দাখিল(ভোক)/ সমমানের পরীক্ষায় পাস ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
এইচএসসি (কারিগরী):
শুধুমাত্র এসএসসি (কারিগরী) সকল বিষয়ে পাশ ছাত্র-ছাত্রীরা সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে।

গ) যারা নার্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবন গঠন করতে চায়:
বাংলাদেশে নার্সিং প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য সরকারী পর্যায়ে ৩৮টি ও বেসরকারী পর্যায়ে অনুমোদিত ৫টি নার্সিং ট্রেনিং ইন্সটিটিউট রয়েছে। এই ইন্সটিটিউটগুলোতে ৩ বছর মেয়াদী ‘ডিপ্লোমা ইন জেনারেল নার্সিং’ এবং এক বছর মেয়াদী ‘ডিপ্লোমা ইন অর্থোপেডিক/মিডওয়াইফারী’ কোর্স রয়েছে।

বাংলাদেশের সবচাইতে নির্ভরযোগ্য নার্সিং স্কুল হচ্ছে, “কুমুদিনী নার্সিং স্কুল” যা নারায়নগঞ্জের মির্জাপুরে অবস্থিত ও কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট কর্তৃক পরিচালিত। কুমুদিনী নার্সিং স্কুল থেকে ‘বিএসসি ইন নার্সিং’ ডিগ্রী অর্জন করা যায়।
‘বাংলাদেশ কলেজ অব নার্সিং’ মহাখালীতে অবস্থিত দেশের একমাত্র নার্সিং কলেজ। কিন্তু এতে কোন ডিপ্লোমা কোর্সের ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত এবং দুই বছর মেয়াদী ‘বিএসসি ইন নার্সিং’ এবং ‘বিএসসি ইন পাবলিক হেল্থ নার্সিং’ কোর্স পরিচালনা করছে। বিভিন্ন নার্সিং স্কুল থেকে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং ডিগ্রী অর্জনকারীরা এখান থেকে বিএসসি ডিগ্রী অর্জন করতে পারে।

ঘ) প্রাথমিক শিক্ষকতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ:
প্রতি জেলায় প্রাইমারী টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (পিটিআই) আছে, যারা একবছর মেয়াদী ‘সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন’ প্রোগ্রাম পরিচালনা করে। এসএসসি পাশ ছাত্র-ছাত্রীরা এই কোর্সে অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে আজকাল শুধু এসএসসি পাশ ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষকতায় সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

বিভিন্ন প্রতিকুলতার কারণে যারা এসএসসি’র পরে শিক্ষা জীবন শেষ করতে সমর্থ হবেনা:

বিভিন্ন প্রতিকুলতার কারণে মূলধারার শিক্ষা বা কারিগরীতে ডিপ্লোমা অর্জনের সুযোগ না পেলেও রয়েছে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ। যা কাজে লাগাতে পারলেও বহুদূর যাওয়া যায়। যেমন:
National Hotel and Tourism Institute এসএসসি’র পরে যে কোর্সগুলোতে প্রশিক্ষণের সুযোগ দিচ্ছে:
ক) ডিপ্লোমা ইন হোটেল ম্যানেজমেন্ট: বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ন্যাশনাল হোটেল এণ্ড ট্যুরিজম ট্রেইনিং ইন্সটিটিউট থেকে এইচএসসি পাশ করার পরে এই বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করা হয়। এই কোর্সের মেয়াদ দুই বছর। কোর্স ফি ১,৬০,০০০.০০ টাকা।
খ) প্রফেশনাল শেফ কোর্স: একই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রফেশনাল শেফ কোর্স গ্রহণ করা গ্রহণ করা যাবে ৯০,০০০.০০ টাকা কোর্স ফি এর বিনিময়ে। এই কোর্স শেষে দেশে বিদেশের নামী দামী ফাইভ স্টার মানের হোটেলে শেফ এবং শেফ সহকারী হিসেবে চাকরী প্রাপ্তির সম্ভাবনা আছে।
গ) ন্যাশনাল সার্টিফিকেট কোর্সেস:
১. ফুড এণ্ড বেভারেজ প্রোডাকশন : ২৫,০০০.০০ টাকা কোর্স ফি
২. ফুড এণ্ড বেভারেজ সার্ভিস : ২০,০০০.০০ টাকা কোর্স ফি
৩. ফ্রন্ট অফিস এণ্ড সেক্রেটারীয়েট : ২০,০০০.০০ টাকা কোর্স ফি
৪. বেকারী এণ্ড পেস্ট্রি প্রোডাকশন : ২০,০০০.০০ টাকা কোর্স ফি
৫. হাউস কিপিং এণ্ড লন্ড্রি অপারেশন : ১৬,০০০.০০ টাকা কোর্স ফি
৬. ট্রাভেল এজেন্সেী এণ্ড ট্যুর অপারেশন : ২০,০০০.০০ টাকা কোর্স ফি
ঘ) ডিপ্লোমা ইন ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট: এইচএসসি পাশ করার পরে এই বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করা হয়। এই কোর্সের মেয়াদ এক বছর। কোর্স ফি ৮০,০০০.০০ টাকা।
ঠিকানা: ন্যাশনাল হোটেল এণ্ড ট্যুরিজম ইন্সটিটিউট, ৮৩-৮৮ মহাখালী, ঢাকা।

(বিঃদ্রঃ কোর্স ফি সমূহ প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়)

বাংলাদেশ কারিগীর শিক্ষা বোর্ড দিচ্ছে ৩-৬ মাসের স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ যেমন:
Auto Mechanics
Electrical House Wiring
Machinist
Maintenance of Electrical Equipment
Plumbing and Pipe Fitting
Radio and Television Servicing
Refrigeration and Air Conditioning
Dress Making and Tailoring
Motor Cycle and Mishuk Mechanics
General Electrician
AutoCAD
Mobile Phone Servicing
Food & Beverage Production

Food & Beverage Service
House Keeping
Aminships
Acting & Presentation
Masonry And Rod Binding
Apparel Merchandising
Pastry And Bakery Production
Travel Tour Operation
Driving Cum Auto Mechanics
Interior Decoration (Gipsum Decoration)
Welding And Fabrication
Ducking And Fabrication
Secretarial Science
Building and Architectural
Drafting with AutoCAD
Computer Office Application
Hardware And Networking
Computer Programming
Database Programming
Object Oriented Programming
Graphic Design and Multimedia Programming
Welding 6G
Industrial Sewing Machine and Maintenance
Diesel Mechanics
নুন্যতম অষ্টম শ্রেণী পাশ হলেই এই কোর্স সমূহে ভর্তি হওয়া যাবে, নুন্যতম বয়স হতে হবে ১২ বছর।

এছাড়া ৬৪ টি জেলায় অবস্থিত যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর দিচ্ছে ৪১ টি বিষয়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ। প্রশিক্ষণ গ্রহন করে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণেরও সুযোগ রয়েছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে।

এসএসসি’র পর পরই যারা চাকরীতে যোগ দিতে চায়: সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীতে নন কমিশণ্ড বিভাগে যোগদানের সুযোগ রয়েছে।

সেনাবাহিনী:
শিক্ষাগত যোগ্যতা: যে কোন বিভাগ থেকে এসএসসি জিপিএ ২.০।
বয়স: ১৭-১৯ বছর।
বৈবাহিক অবস্থা: অবিবাহিত।
শারীরিক যোগ্যতা:
– উচ্চতা: ৫ফুট ৬ ইঞ্চি।
– ওজন: ৪৯.৯০ কেজি।
– বুক: সাধারণ- ০.৭৬ মিটার, প্রসারণ- ০.৮১ মিটার।
জন্মসূত্রে বাংলাদেশী হওয়া ও সাঁতার জানা বাধ্যতামূলক।

বিমান বাহিনী:
শিক্ষাগত যোগ্যতা:
টেকনিক্যাল: এসএসসি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ২.৫। উচ্চতর গণিত ঐচ্ছিক বা বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে থাকতে হবে।
নন-টেকনিক্যাল: এসএসসি যে কোন বিভাগ থেকে জিপিএ ২.৫।
বয়স: ১৬-২১ বছর।
বৈবাহিক অবস্থা: অবিবাহিত।
শারীরিক যোগ্যতা:
– উচ্চতা: কমপক্ষে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি।
– ওজন: বয়স অনুযায়ী।
– বুক: প্রসারণ সহ ৩০-৩২ ইঞ্চি।

নৌ বাহিনী:
শিক্ষাগত যোগ্যতা:
সিম্যান, কমিউনিকেশন্স, টেকনিক্যাল, মেডিকেল: এসএসসি বিজ্ঞান বিভাগসহ নূন্যতম জিপিএ ২.৫। উচ্চতর গণিতধারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে
পেট্রোলম্যান ও অন্যান্য শাখা: এসএসসি যে কোন বিভাগ থেকে নুন্যতম জিপিএ ২.৫।
বয়স: ১৬-২০ বছর।
বৈবাহিক অবস্থা: অবিবাহিত।
শারীরিক যোগ্যতা:
– উচ্চতা: কমপক্ষে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি।
– ওজন: বয়স অনুযায়ী।
– বুক: প্রসারণ সহ ৩০-৩২ ইঞ্চি।
জন্মসূত্রে বাংলাদেশী হওয়া ও সাঁতার জানা বাধ্যতামূলক।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ:
শিক্ষাগত যোগ্যতা: যে কোন বিভাগ থেকে এসএসসি পাশ।
বয়স: ১৭-২২ বছর।
বৈবাহিক অবস্থা: অবিবাহিত।
শারীরিক যোগ্যতা:
– উচ্চতা: ৫ফুট ৬ ইঞ্চি।
– ওজন: ৪৯.৮৯৫ কেজি।
– বুক: প্রসারণসহ ৩২-৩৪ ইঞ্চি।
জন্মসূত্রে বাংলাদেশী হওয়া ও সাঁতার জানা বাধ্যতামূলক।

উপরোক্ত বাহিনীসমূহ এসএসসি পরীক্ষার পরপর নন কমিশণ্ড সৈনিক নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় এবং জেলা ভিত্তিক বাছাই পরীক্ষা আয়োজন করে। এছাড়াও এইচএসএসসি পরীক্ষার পরপর কমিশণ্ড অফিসার নিয়োগের জন্য একই প্রক্রিয়ায় বাছাই পরীক্ষা আয়োজন করে। তাই যারা অফিসার হিসেবে নিজেকে দেখতে চায়, তাদের এইচএসসি’র পরে চেষ্টা করতে হবে।

শিক্ষাজীবন শেষে যারা সরকারী চাকুরীতে যোগদান করতে চায়:

উচ্চ পর্যায়ের সরকারী চাকুরে হতে চাইলে দুইটি পর্যায় আছে: ক্যাডার ও নন ক্যাডার। উভয় ধরণের নিয়োগই বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) এর ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে মোট ২৭টি বিভাগে (বিসিএস-প্রশাসন, বিসিএস-কর, বিসিএস- শিক্ষা, বিসিএস-পুলিশ, বিসিএস- পররাষ্ট্র, ইত্যাদি) এই নিয়োগ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্নকারী অথবা চার বছরের স্নাতক কোর্স সম্পন্নকারী ছাত্র-ছাত্রীরা ২১-৩০ বছর বয়স সীমার মধ্যে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, স্বাস্থ্য ক্যাডার এবং আদিবাসীদের জন্য শিক্ষা ক্যাডারে এই বয়স সীমা ৩২ বছর পর্যন্ত বর্ধিত। তিনটি পর্যায়ে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়: প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা, যারা উত্তীর্ণ হবে তাদের জন্য লিখিত পরীক্ষা এবং যারা উত্তীর্ণ হবে তাদের জন্য ভাইভা পরীক্ষা। সামগ্রিক প্রক্রিয়া শেষ করে ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশিত হতে প্রায় দুই বছর সময় লাগে। প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা সাধারণত মে/ জুন মাসে অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় অক্টোবর/ নভেম্বর/ ডিসেম্বর মাসে। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর প্রায় ১৫০,০০০ থেকে ২০০,০০০ প্রার্থী এই পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ করে এবং মাত্র ০.০০৫% চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। এতেই বোঝা যাচ্ছে কি প্রচণ্ড রকম প্রতিযোগিতা বিসিএস পরীক্ষায় মোকাবিলা করতে হয়।

বিভিন্ন পেশায় থেকেও যারা উচ্চ শিক্ষা চালিয়ে যেতে চায়:

দারিদ্র, পারিবারিক অবস্থা ইত্যাদির কারণে পেশা-জীবনে প্রবেশ করেও যারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ অব্যাহত রাখতে চায়, তাদের জন্য সহায়ক হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় যা ৮০ টি কো-অর্ডিনেটিং সেন্টার ও ১১০৬ টি স্টাডি সেন্টারের মাধ্যমে এসএসসি, এইচএসসি সহ বিভিন্ন বিষয়ে গ্রাজুয়েশন ও পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী অর্জনের সুযোগ করে দিচ্ছে।

উপসংহার:

জীবনে সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো আকাঙ্খা। এক তরুণ দার্শনিক সক্রেটিসকে জিজ্ঞাসা করেছিল, সাফল্য লাভের রহস্য কি? সক্রেটিস তাকে পরের দিন নদীর ধারে দেখা করতে বললেন। দেখা হবার পরে দুজনে জলের দিকে এগোতে থাকলেন এবং একগলা জলে গিয়ে দাঁড়ালেন। হঠাৎ কিছু না বলে সক্রেটিস জোর করে যুবকটির ঘাড় ধরে জলের মধ্যে ডুবিয়ে দিলেন। ছেলেটি জলের উপরে মাথা তোলার যতই চেষ্টা করে, সক্রেটিস ততই তাকে শক্ত হাতে জলের নীচে ডুবিয়ে রাখেন। বাতাসের অভাবে নীল হয়ে গেল ছেলেটির মুখ। সক্রেটিস তখন তার মাথাটি জলের উপরে তুললেন। ছেলেটি হাঁসফাঁস করে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিল। সক্রেটিস জিজ্ঞেস করলেন, “যতক্ষণ জলের নীচে ছিলে তখন তুমি সবচাইতে আকুলভাবে কি চাইছিলে?” ছেলেটি জবাব দিল- বাতাস। সক্রেটিস বললেন, “এটিই সাফল্যের রহস্য”। তুমি যেভাবে বাতাস চাইছিলে সেইভাবে যখন সাফল্য চাইবে তখন তুমি সাফল্য পাবেই। সাফল্যের কোন গূঢ় রহস্য নেই। (সূত্র: তুমিও জিতবে- শিব খেরা)

Leave a Reply