Skip to content
Home » রাজনীতি ও খ্রিস্টান সমাজ

রাজনীতি ও খ্রিস্টান সমাজ

খ্রিস্টভক্তগণ কি রাজনীতিতে জড়িত হতে আহুত?

আপনি কি সমাজে বড় ধরণের কোন পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন? নিশ্চিতভাবে আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছাড়া বড় ধরণের সামাজিক সমস্যাগুলোর আসলে কোন সমাধান করা যায়না এবং ন্যায্য সমাজ গঠন করা পারতপক্ষে অসম্ভব কাজে পরিণত হয়। রাজনীতিতে জড়িত হওয়া এক অর্থে খ্রিস্টান হয়ে ওঠারও সাধনা, কারণ এর মাধ্যমেই একজন খ্রিস্টভক্ত রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিক হিসেবে পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়। কাথলিকদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় তার ধর্মীয় বিশ্বাস এবং বিবেকের পরিচালনায়। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে, সামাজিক ন্যায্যতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে খ্রিস্টভক্তদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে মণ্ডলী সবসময়ই উদারভাবে অনুপ্রেরণা দান করে। Italy’s Christian Life Community and the Student Missionary League এর প্রতিনিধিদলের সাথে ৩০ এপ্রিল ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ তারিখে এক আলোচনা সভায় পোপ ফ্রান্সিস বলেন, “কাথলিকদের অবশ্যই রাজনীতিতে জড়িত হতে হবে, এমনকি যদি রাজনৈতিক অবস্থা ‘নোংরা’, হতাশা এবং ব্যর্থতায় পূর্ণ হয় তবুও!” (Carol Glatz– Catholic News Service; NATIONAL CATHOLIC REPORTER, 1 May 2015)।

আধুনিক গণতান্ত্রিক মতবাদ এবং সমাজ ও অর্থনীতিতে এর অনুপ্রবেশ, যেগুলো কাথলিক মণ্ডলীর সামাজিক শিক্ষার পপিন্থী; সেগুলোকে মণ্ডলী পুরোপুরিভাবে সমর্থন করেনা। রাজনীতিতে অংগ্রহণেচ্ছু খ্রিস্টভক্তদের দায়িত্ব হচ্ছে খ্রিস্ট মণ্ডলীর সামাজিক শিক্ষার আদর্শ অনুযায়ী নিজ রাজনৈতিক দর্শনের সাক্ষ্য দান করা এবং তাতে অবিচল থাকা। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে দেখা যায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এমন নৈতিকতা পরিপন্থী কাজ করছে বা এগুলোকে আইনসিদ্ধ করছে, যা কাথলিক মণ্ডলীর সামাজিক শিক্ষার সাথে সংঘর্ষিক; যেমন: গর্ভপাত, স্বেচ্ছা মৃত্যুবরণ, বিবাহহীন পরিবার, সমলিঙ্গে বিবাহ, ইত্যাদি বিষয়কে বৈধকরণ বা মতবাদগুলোকে সমর্থন দান। এ’সব ক্ষেত্রে সকল খ্রিস্টভক্তের দায়িত্ব হচ্ছে এই আইন সমূহের বিরোধিতা করা এবং প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানানো। সমাজ সংশ্লিষ্ট নৈতিক সত্যকে রক্ষা এবং তা সকল মানুষের কাছে প্রচার করতে খ্রিস্টভক্তগণ আহুত, যেমন: ন্যায্যতা, স্বাধীনতা, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সংস্কৃতি-ভাষা-লিঙ্গ নির্বিশেষে মানব ব্যক্তির মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা ইত্যাদি।

পবিত্র বাইবেলে রাজনীতি বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি

ফরিসিরা পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলেন, যীশুখ্রিস্ট জগতের শাসনকর্তাকে মান্য করেন কি না। তারা ইহুদী বিধান অনুযায়ী সম্রাট সীজারকে কর দেয়া উচিত কি অনুচিত, সেই ব্যাপারে যীশুখ্রিস্টের পরামর্শ চান। “তারা তখন একটা রুপোর টাকা এনে তাঁর হাতে দিল। তিনি তাদের বললেন: ‘এটা কার প্রতিমূর্তি? এতে কার নাম লেখা রয়েছে?’ তারা উত্তর দিল: ‘সীজারের!’ তিনি তখন তাদের বললেন, ‘তাহলে, যা সীজারের, তা সীজারকেই দাও! আর যা ঈশ্বরের, তা ঈশ্বরকেই দাও!’” (দ্র: মথি ২২:১৭-২১)। যীশুখ্রিস্ট পরমেশ্বরকে সেবা করেও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন হতে আমাদের বিরত থাকার উপদেশ দেননি। রোমীয়দের কাছে লেখা ধর্মপত্রে সাধু পল শাসকদের প্রতি খ্রিস্টভক্তদের কর্তব্য সম্পর্কে শিক্ষায় বলেছেন কেন শাসকদের মান্য করতে হবে, কিভাবে কর্তৃপক্ষের ভয় না করে সত্য ও ন্যায্য কাজ করতে হবে, কিভাবে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঈশ্বর ঐশ ক্রোধের প্রকাশ ঘটান, কিভাবে বিবেকের পরিচালনায় থাকতে হবে। “তোমরা যাঁকে যা দেওয়ার, তা-ই দাও! যাঁকে কর দেওয়ার কথা, খাজনা দেওয়ার কথা, তাঁকে তা-ই দাও! যাঁকে সম্ভ্রম করার কথা, সম্মান করার কথা, তাঁকে সম্ভ্রম-সম্মানই কর!” (দ্র: রোমীয় ১৩:১-৭) সাধু পল রোমীয় খ্রিস্টানদের এই শিক্ষা যখন দিয়েছেন, তখন কিন্তু রোমীয় শাসনকর্তা খ্রিস্টভক্তদের প্রতি উদার মনোভাবী নয়! (৫৭-৫৮ খ্রিস্টাব্দ) অধিকন্তু শাসনকর্তাদের জন্য প্রার্থনা করতেও সাধু পল আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। “সর্বপ্রথমেই একটা কথা আমি জোর দিয়ে বলতে চাই: সকল মানুষের জন্যে আর বিশেষ ক’রে যত রাজা এবং কর্তৃপক্ষ-স্থানীয় সকলেরই জন্যে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, মিনতি, আবেদন এবং ধন্যবাদ জানানো উচিত, ধর্মীয় আদর্শ ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখেই যাতে আমরা স্থির শান্ত জীবন যাপন করতে পারি। এমন প্রার্থনা জানানো ধর্মসম্মত কাজ।” (১ তিমথি ২:১-৩)

মাণ্ডলীক শিক্ষায় রাজনীতি

কাথলিক মণ্ডলীর ধর্মশিক্ষা গ্রন্থে সমাজ-জীবনে কর্তৃপক্ষ ও শাসন ব্যবস্থা তথা রাজনৈতিক বিষয়াদিতে কাথলিক মণ্ডলীর শিক্ষা সুস্পষ্টভাবে সংকলিত হয়েছে।

সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহ টিকিয়ে রাখতে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সকলের মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যে বৈধ কর্তৃপক্ষ নিয়োগ করা আবশ্যক; যেমন: পরিবারে বাবা বা মা, গ্রামে মাতব্বর, ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও মেম্বার, ইত্যাদি। বৈধ কর্তৃপক্ষের আইন তৈরী, মানুষকে আদেশ প্রদানের অধিকার আছে এবং তারা মানুষের কাছে বাধ্যতা প্রত্যাশা করতে পারে। সমাজকে পরিচালনা ও রাষ্ট্রে একতা নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই অধিকারপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ থাকতে হয়; যেমন: প্রধানমন্ত্রী বিহীন বাংলাদেশের কথা অকল্পনীয়, সাংসদবিহীন সংসদও আমরা কল্পনা করতে পারিনা। কর্তৃপক্ষের এই অধিকার প্রকৃতিগতভাবেই মানব-স্বভাবে বিদ্যমান; মানুষ সবসময়ই নিজেদের জন্য দলপতি বেছে নেয়, লিখিত বিধি, উপবিধি থাকুক আর নাইবা থাকুক। নৈতিকতার আলোকে শাসন পরিচালনার জন্য কর্তৃপক্ষের যে অধিকার, তা ঈশ্বরের কাছ থেকেই আসে; তবে অবশ্যই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অধিকার নয়। কর্তৃপক্ষকে সম্মান করা এবং প্রাপ্য কৃতজ্ঞতা ও সদিচ্ছা দেয়ার জন্য খ্রিস্টভক্তদের শিক্ষা দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা এবং নেতৃবৃন্দের মনোনয়ন নাগরিকদের স্বাধীন ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে; আমরা তাই বেছে নেই সমাজতন্ত্র না গণতন্ত্র, রাষ্ট্রপতি শাসিত না প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার ব্যবস্থা, ইত্যাদি। বৈধপন্থায় সমাজের মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যে শাসন ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক দলে বিচিত্রতা থাকতে পারে। কোন রাজনৈতিক দর্শন প্রাকৃতিক নিয়ম, জনসাধারণের ঐতিহ্যগত রীতি-নীতি এবং মৌলিক অধিকার পরিপন্থী হলে তা সকল জনগণের মঙ্গল সাধন করতে পারে না। মনে রাখা জরুরী যে, কর্তৃপক্ষের নৈতিক বৈধতার উৎস সে নিজে নয়। স্বাধীনতা এবং দায়িত্ববোধ থেকেই আসে নৈতিক ক্ষমতা। তাই মানুষের স্বেচ্ছাচারী আচরণ গ্রহণীয় নয়। যদি সমাজের মানুষের সাধারণ মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ নীতিসিদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ করে, সেটাই হচ্ছে অধিকারের বৈধ প্রয়োগ। নৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জারি করা কোন আইন নীতিগতভাবে জনগণ মেনে নিতে পারে না এবং কর্তৃপক্ষ যদি তা করে তাহলে জনগণ বিরুদ্ধাচারী হয় এবং জনগণের উপরে কর্তৃপক্ষ তাদের অধিকার হারায়। ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য তাই আইনের শাসন প্রয়োজন, মানুষের বা নেতৃবৃন্দের স্বেচ্ছাচারিতা নয়। (দ্র: কাথলিক মণ্ডলীর ধর্মশিক্ষা, অনুচ্ছেদ ১৮৯৭-১৯০৪)

যদিও বিশ্বব্যাপী অনেক কাথলিক খ্রিস্টভক্ত রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট, তথাপি কাথলিক মণ্ডলী কোন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী নয়। প্রত্যেক মানুষকে সমান ও একই মর্যাদায় ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন। তাই প্রত্যেক মানুষেরই সমাজের সকল সম্পদের উপরে সমান অধিকার আছে। যে রাজনৈতিক দর্শন এই সত্যকে মেনে নিয়ে সকল মানুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে প্রস্তুত, সেই রাজনৈতিক দর্শনকে কাথলিক মণ্ডলী শ্রদ্ধা করে এবং সমর্থন জানায়; যদিও পরিপূর্ণভাবে এমন রাজনৈতিক দর্শন এখনো জগতে তৈরী হয়নি। কাথলিক মণ্ডলীর এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার জন্য একদিকে প্রয়োজন বেশী সংখ্যক খ্রিস্টভক্তের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, অপরদিকে সেই খ্রিস্টভক্তের এই মতবাদের প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা ও সমর্থন। তথাপি কোন ব্যক্তির রাজনীতিতে অংশগ্রহণকে মণ্ডলী অনুপ্রাণিত করলেও, উপরোক্ত ব্যক্তির রাজনৈতিক কার্যকলাপ মণ্ডলীর ইচ্ছা নয় বরং ব্যক্তির স্বাধীন ইচ্ছা এবং নৈতিক বিবেক দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়।

রাজনৈতিক জীবনে কাথলিকদের অংশগ্রহণ

Congregation for the Doctrine of the Faith ২৪ নভেম্বর ২০০২ খ্রিস্টাব্দে Doctrinal Note of some questions regarding the Participation of Catholics in Political Life নামে একটি ডক্যুমেন্ট প্রকাশ করেছে। এটি প্রস্তুত করেছেন Congregation এর তৎকালীণ Prefect কার্ডিনাল যোসেফ র‌্যাটসিংগার, যিনি পরে পোপ হিসেবে নির্বাচিত হয়ে যোড়শ বেনেডিক্ট হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। উপরোক্ত নথি হতে কয়েকটি বিষয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা যেতে পারে।

নাগরিক হিসেবে কাথলিকগণ তাদের দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করে (দ্র: কাথলিক মণ্ডলীর ধর্মশিক্ষা ২২৪০)। মণ্ডলী এমনকি এমন পুরুষ ও নারীদেরকে সাধু বা সাধ্বী হিসেবেও ভক্তি করে যারা কি না রাজনৈতিক কিংবা সরকারী বিষয়ে প্রতিশ্রুত ব্যক্তি ছিলেন। সাধু টমাস মুর তেমনি একজন যাকে রাজনৈতিক নেতা এবং কর্মকর্তাদের প্রতিপালকরূপে পোপ দ্বিতীয় জন পল ঘোষণা দিয়েছেন। জীবনব্যাপী সাধু টমাস মুর শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে ঈশ্বর হতে আলাদা করা যায়না, একইভাবে রাজনীতিকেও নৈতিকতা হতে আলাদা করা সম্ভব নয়। মানবিক বিবেকের মর্যাদা যে মানব জীবন হতে অবিচ্ছেদ্য তা সাক্ষ্য দিতে গিয়ে তিনি নির্যাতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।

আজকের গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় জীবনে সকল খ্রিস্টভক্ত কিংবা অন্য বিশ্ববাসী মানুষ পূর্ণভাবে অংশগ্রহণে আহুত। সকল নাগরিকই তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দিতে পারে, বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে পরামর্শ ও সমাধান এবং কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে যা সকলের জন্য মঙ্গলময়। সকলের সাথে একই কাজ করতে গিয়ে খ্রিস্টভক্তগণ ‘খ্রিস্টিয় মূল্যবোধ’ ব্যবহার করে নাগরিক দায়িত্ব পালন করবে, এটুকুই মাত্র বাড়তি দায়িত্ব। বিভিন্ন অর্থনৈতিক, সামাজিক, আইনী, প্রশাসনিক এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে সংগঠিত বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সাধারণ মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যে অংশগ্রহণ করার নাগরিক দায়িত্ব থেকে খ্রিস্টভক্তগণ যেন কখনোই নিজেদের গুটিয়ে না নেয় সেই ব্যাপারে দ্বিতীয় ভাটিকান মহাসভা শিক্ষা দিয়েছে। যেমন: সম্প্রীতি ও শান্তি, স্বাধীনতা ও সমঅধিকার, মানব জীবন ও প্রকৃতির প্রতি মর্যাদা, ন্যায্যতা এবং সংহতি।

বর্তমান সময়ে নাগরিক জীবন বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মানব ব্যক্তির মর্যাদার প্রতি জনগণ আগের চাইতে বেশী সচেতন হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে দায়িত্ববোধ ও অংশগ্রহণও আগের চাইতে অনেক বেড়েছে। তথাপি এই কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, একটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থাও বিদ্যমান। এমন কিছু বিষয়কে সমাজ ও রাষ্ট্র আইনগত স্বীকৃতি দিচ্ছে যেগুলো ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ইতিবাচক হবে না। দিন দিন মানুষ ভাবতে অভ্যস্ত হচ্ছে যে, নৈতিকতা বিষয়ে তারা সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন। আইন প্রণেতাগণ এই ব্যাপারে জনগণের ভাবনাকে গণতান্ত্রিকতা’র দোহাই দিয়ে সম্মান জানাচ্ছে এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রশ্নে এমন আইন প্রণয়ন করছে যেগুলো প্রাকৃতিক নিয়ম, সাংস্কৃতিক এবং নৈতিক রীতি-নীতিকে ক্ষুন্ন করছে।

মণ্ডলী স্বীকার করে যে, রাজনৈতিক দর্শন বা দল পছন্দের ক্ষেত্রে গণতন্ত্র হচ্ছে অপেক্ষাকৃত ভাল পদ্ধতি, তবে গণতন্ত্র ততক্ষণ পর্যন্তই সফল যতক্ষণ পর্যন্ত তা তার কার্যকলাপে মানব ব্যক্তি সম্পর্কে সঠিক বোঝাপড়া দৃশ্যমান থাকে এবং মানুষের অধিকার রক্ষার ইশতেহার সুনিশ্চিত হয়। কাথলিকদের রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট হতে হলে এই আদর্শে অবশ্যই আপোষহীন থাকতে হবে নয়তো জগতে খ্রিস্টবিশ্বাসের সাক্ষ্যদান কখনোই সম্ভব হবেনা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, যার উপরে আজকের বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে আছে, তার ভিত্তি অবশ্যই হতে হবে মানব ব্যক্তি। নয়তো এই ব্যবস্থা টিকে থাকবে না। মানুষের প্রতি মর্যাদাই গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণকে সম্ভব করে তোলে। যেখানে মানুষের প্রতি মর্যাদা নেই, সেখানে গণতন্ত্রও নেই। দ্বিতীয় ভাটিকান মহাসভায় যেমন বলা হয়েছে, “ব্যক্তি-মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা নাগরিকদের অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব, কারণ তা নিশ্চিত হলেই ব্যক্তিগত ও দলগতভাবে তারা গণজীবন ও প্রশাসনিক কাজে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারবে।” (দ্র: বর্তমান জগতে খ্রিস্টমণ্ডলী, অনুচ্ছেদ ৭৩) পোপ দ্বিতীয় জন পল মণ্ডলীর শিক্ষা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, মানব জীবনের মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে এমন যে কোন আইন প্রণয়নে বিরোধীতা করা এবং প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়া প্রত্যেক কাথলিক আইন প্রণেতা’র নৈতিক এবং অবশ্য কর্তব্য (দ্র: পোপ দ্বিতীয় জন পলের Encyclical Letter Evangelium Vitae, অনুচ্ছেদ ৭৩)। তাদের সর্বদা খেয়াল রাখা জরুরী যেন মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা পায়, এমনকি গর্ভের শিশুও; পরিবার প্রতিষ্ঠান যেন সংরক্ষিত এবং প্রসারিত হয় বিবাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে; আর কোন ব্যবস্থাই যেন বিবাহের ন্যায় সমান আইনগত মর্যাদা লাভ না করে। আইন প্রণেতাদের সচেতন হতে হবে যেন আধুনিক দাসত্ব (মাদকাসক্তি, পাচার, যৌন ব্যবসা) থেকে সমাজের শিশু ও তরুণগণ সুরক্ষিত থাকে।

এমনও দেখা গিয়েছে, হয়তো কোন প্রতিষ্ঠান কাথলিক আদর্শে গঠিত হয়েছিল। কিন্তু তারা তারা এমন কোন রাজনৈতিক দল বা শক্তিকে সমর্থন যোগাচ্ছে যাদের ইশতেহার নৈতিক শিক্ষা এবং মণ্ডলীর সামাজিক শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক। যে’সব প্রতিষ্ঠান নিজেদের কাথলিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচয় দেয়, তারা যদি কোনভাবে নৈতিক শিক্ষা ও মণ্ডলীর সামাজিক শিক্ষার পরিপন্থী কোন কার্যকলাপে লিপ্ত হয়, তাহলে তারা ‘কাথলিক’ প্রতিষ্ঠান পরিচয় দানের অধিকার হারায়। আবার দেখা যায়, কিছু কাথলিক সংবাদপত্রও এমন ধরণের রাজনৈতিক দর্শনকে সমর্থন জানাচ্ছে যা মণ্ডলীর সামাজিক শিক্ষার আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক। কাথলিক সংবাদপত্রেগুলোও এরূপ সমর্থন জানানোর কারণে ‘কাথলিক’ পরিচয় দানে অযোগ্য হচ্ছে।

মণ্ডলী অবশ্যই ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তথাপি মণ্ডলী শিক্ষা দেয় যে, খাঁটি স্বাধীনতা কখনোই খাঁটি সত্যকে পাশ কাটিয়ে টিকতে পারে না। “সত্য এবং স্বাধীনতা হয় হাতে হাত ধরে একসাথে এগিয়ে যাবে, নয়তো পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উভয়েই ধ্বংস হয়ে যাবে” (দ্র: পোপ দ্বিতীয় জন পলের Encyclical Letter Fides et ratio, অনুচ্ছেদ ৯০)। যে সমাজে সত্যের ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়না বা সত্যকে কখনো আশা করা হয়না, সেই সমাজে ব্যক্তি স্বাধীনতার খাঁটি চর্চা ক্রমশ দূর্বল হয়ে পড়বে; বাড়বে স্বেচ্ছাচারীতা ও বিচ্ছিন্নবাদী চেতনা এবং হ্রাস পাবে মানব ব্যক্তির মর্যাদা ও সমগ্র সমাজের জন্য সাধারণ ও সামগ্রিক মঙ্গল চিন্তা।

বাংলাদেশে খ্রিস্টানদের রাজনৈতিক বাস্তবতা

একটা সময় ছিল, যখন রাজনীতি করা দূরে থাক; যে কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখাটাই ছিল খ্রিস্টানদের প্রবণতা। তবে শিক্ষার হার বাড়ার সাথে সাথে এই দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসছে। ব্যাপকহারে রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত না হলেও, খ্রিস্টভক্তদের মধ্যে নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন, অংশগ্রহণ, সহায়তা দানে কাথলিক খ্রিস্টভক্তগণের অবদান আজ স্বীকৃত।

একসময় উৎসাহ বোধ না করলেও, কাথলিকরা এখন রাজনৈতিক আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে, বিতর্কে অবতীর্ণ হয়, ভোটাধিকার প্রয়োগ করে, পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালায়। সচেতন নাগরিক হিসেবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজনৈতিক দলসমূহের স্থানীয় শাখাগুলোতে খ্রিস্টভক্তগণ সম্পৃক্ত হচ্ছে। অনেকে স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে বিজয়ীও হচ্ছেন। প্রয়াতঃ এডভোকেট প্রমোদ মানখিন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন, মন্ত্রীপরিষদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে তার পুত্র জুয়েল আরেং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

আবার নাগরিক সুবিধা গ্রহণ যেমন চার্চের রেজিস্টারের পাশাপাশি সরকারী রেজিস্টারে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করানো’র হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণে খ্রিস্টানদের মধ্যে অনীহা দেখা যায়না। বিভিন্ন সময়ে সরকার পরিচালিত বিভিন্ন এডভোকেসী কর্মসূচীতে কাথলিকদের স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে। আবার বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে কাথলিক হিসেবে নিজস্ব মতবাদ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ বা দলগতভাবে বিভিন্ন সভা, সমাবেশ, মানব-বন্ধন কিংবা প্রতিবাদ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণও লক্ষণীয়। জাতীয় ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে খ্রিস্টানদের সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রভূত অগ্রগতি হয়েছে।

তথাপি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের তুলনায় মণ্ডলী ও খ্রিস্টভক্ত হিসেবে সরকারী সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের ব্যাপারে আমরা সন্দিহান ও পিছিয়ে আছি। দেশীয় রাজনীতির বর্তমান সংস্কৃতিকে অপেক্ষাকৃত বেশী সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন ব্যবসায়ী, প্রাক্তন আমলা ও সেনা কর্মকর্তা, ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গ। এসব পেশাগত ক্ষেত্রে আবার আমাদের অবস্থান এখনো ততটা শক্তিশালী নয়। তাই অনেক খ্রিস্টভক্ত সক্রিয় রাজনীনিতে জড়িত হলেও জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার আশা করতে পারেন না। ধীরে ধীরে তৃণমূল স্তর থেকে অবস্থান তৈরীতেও খ্রিস্টভক্ত হিসেবে আমরা পিছিয়ে আছি। নিজ সমাজে পছন্দনীয় রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে খ্রিস্টিয় শিক্ষার আলোকে মানব কল্যাণে সেবাকাজ করে নিজের একটি পরিচিতি সৃষ্টি করা, ইউনিয়ন পরিষদ বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বারে বারে অংশগ্রহণ করে প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে আবির্ভূত হওয়া, নির্বাচিত হলে জনগণের সেবা করার সুযোগ নেয়ার এ’সব প্রক্রিয়া ধীরগতিতে উপরে যাওয়ার পদ্ধতি বলে আমরা উৎসাহী হচ্ছিনা। বরং সরাসরি সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হচ্ছি। তাই সফলতা ধরা দিচ্ছেনা। আবার আমাদের তরুণ সমাজ রাজনীতিকে এখনো নোংরা হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত বিধায় ছাত্র ও যুব রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছেনা। নিঃসন্দেহে ছাত্র ও যুব রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ভবিষ্যত রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পথকে মসৃণ করে। ফল হিসেবে গুটিকতক ব্যক্তিত্ব ব্যতীত খ্রিস্টভক্তদের মধ্যে জাতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী নেই বললেই চলে।

অনেক খ্রিস্ট ধর্মীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংঘ, সমিতিকে বিভিন্ন জাতীয় দিবস যেমন মাতৃভাষা দিবস, শোক দিবস, স্বাধীনতা দিবস কিংবা বিজয় দিবসে সরকারী ছুটি হওয়ায় বনভোজন বা নিজস্ব সামাজিক অনুষ্ঠান পালন করতে দেখা যায়। এই বিষয়গুলো আমাদের জাতীয় চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং মূলধারার জনগণের কাছে আমাদের নেতিবাচকরূপে উপস্থাপন করে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, খ্রিস্টানদের জন্য গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার উত্তম একটি ক্ষেত্র হচ্ছে ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলনগুলো। যেখানে একজন ব্যক্তি সেবাকারী নেতা হওয়ার চর্চা করতে পারে। অনুশীলন করতে পারে সমমনা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে দল গঠন, দায়িত্ব পালনকালীণ প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, ইশতেহার প্রস্তুতি, প্রচারণা চালানো, নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং সদস্যদের সাধারণ মঙ্গলের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার। কিন্তু অনুশীলনের শুরুতেই আমরা কাথলিক মণ্ডলীর সামাজিক শিক্ষা অনুযায়ী সার্বজনীন সাধারণ কল্যাণের উদ্দেশ্যে আমাদের পক্ষে সেবা কাজ করা সম্ভব কি না সেই বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছি। দেশের প্রতিষ্ঠিত অনেক ক্রেডিট ইউনিয়নই নেতৃত্বের কোন্দল, দুর্ণিতি, মামলা-মোকদ্দমা, অপরের চরিত্র হনন, নিজের স্বার্থ উদ্ধার, ইত্যাদি কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে যা মণ্ডলীর শিক্ষার সাথে সুস্পষ্টভাবে সাংঘর্ষিক। ক্ষুদ্র পরিমণ্ডলেই যখন আমাদের এই অবস্থা, তখন বৃহত্তর জাতীয় পরিমণ্ডলে আশার আলো দেখানো ও প্রাবক্তিক ভূমিকা গ্রহণের জন্য আমাদের প্রচুর প্রস্তুতি এবং বোঝাপড়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। ‘সাদা’কে ‘সাদা’ বলা এবং ‘কালো’কে ‘কালো’ বলার সক্ষমতা কাথলিক খ্রিস্টভক্ত হিসেবে আমাদের আছে, স্বয়ং পবিত্র আত্মাই আমাদের সে প্রেরণা দান করেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০১৮ এবং আমরা

আমি নিজে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য সংগ্রহ করতে পারিনি, ঠিক কতজন খ্রিস্টভক্ত এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তবে আমেরিকা প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী মিস রোজালীন কস্তা’ সাম্প্রতিক একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছেন। তার জানামতে যারা বিভিন্ন আসনের জন্য বিভিন্ন দলের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন: ময়মনসিংহ ১: জুয়েল আরেং, নেত্রকোণা ১: রেমণ্ড আরেং, খুলনা ১: এডভোকেট গ্লোরিয়া সরকার, বরিশাল ১: দীপিকা, ঢাকা ১: যোসেফ কেনেডি, বরগুনা ২: আন্তনী গোমেজ, নাটোরের বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর আসন: এডভোকেট জন গমেজ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে আরো দু’জন (নাম জানা নেই)। (সূত্র: মিস রোজালীন কস্তা- ফেসবুক স্ট্যাটাস, ১৪ নভেম্বর ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ, বাংলাদেশ সময় সকাল ৪.৩৪ টা) মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন হয়তো তেমন আরো কেউ আছেন। আবার যাদের নাম এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের সকলের পদবী উল্লেখ করা যায়নি। দুঃখ প্রকাশ করছি।

চূড়ান্তভাবে কোন দল কাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তা এখনো পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়নি। তবে ২৭ নভেম্বর ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় ২২০টি আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রাপ্তদের নাম প্রকাশিত হয়েছেন। সেখানে ময়মনসিংহ ১ আসনে জুয়েল আরেং’র প্রার্থীতা নিশ্চিত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশী নয়জনের সকলেই হয়তো মনোনয়ন পাবেন না। তথাপি বাংলাদেশের খ্রিস্টভক্তদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই সবাইকে। যে উদ্যম, ইতিবাচক মনোভাব ও সাহস তারা দেখিয়েছেন, তা সমাজের অনেকের জন্যেই অনুকরণীয় হতে পারে। প্রত্যাশা করি, মনোনয়ন না পেলেও তারা সক্রিয় থাকবেন দলীয় রাজনীতিতে। নিজেদের পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরীতে অবদান রাখবেন। ক্ষমতায় না থেকেও মানবব্যক্তি কেন্দ্রিক সেবা কাজের মাধ্যমে জনমানুষের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারলে, তাদের সুখ-দুঃখের বন্ধু হতে পারলে একদিন না একদিন রাজনৈতিক দলের হাই কমাণ্ড আমাদের প্রার্থীদের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে, মনোনয়ন দেবে! জাতীয় সংসদে আমরাও দেখবো একাধিক খ্রিস্টভক্ত সাংসদকে, যারা দৃপ্ত সাক্ষ্য দান করবে খ্রিস্টিয় মূল্যবোধের।

শেষ কথা

সমাজের দরিদ্রতম এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে ও অধিকার রক্ষা করতে কাথলিক মণ্ডলীর সামাজিক শিক্ষা নির্দেশনা দান করে। সামাজিক শিক্ষা সাতটি ভিত্তির উপর নির্ভর করে রচিত, এবং এর প্রত্যেকটি ব্যক্তি-মানুষের জীবন এবং মর্যাদা’কে গুরুত্ব প্রদান করে। প্রত্যেক খ্রিস্টভক্তই রাজনৈতিক দলে সংযুক্ত থেকে বা না থেকে মণ্ডলীর সামাজিক শিক্ষার আলোকে সামাজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় ব্যক্তিগতভাবে অবদান রাখতে পারে। মণ্ডলী সরাসরি সামাজিক ন্যায্যতাকে প্রচার করে না, বরং খ্রিস্টভক্তদের ঐশ্বরিক ন্যায্যতা সম্পর্কে বুঝতে এবং তা নিজ জীবনে প্রয়োগ করতে শিক্ষা দান করে। যদিও মণ্ডলী সরাসরি কোন রাজনৈতিক দর্শনে সম্পৃক্ত হয় না, তথাপি মাঝে মাঝে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয় যে অসমতা নামক সামাজিক ব্যাধি দখল করে নেয় সামাজিক ন্যায্যতা’কে, দরিদ্রতম মানুষকে বঞ্চিত করে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে; তখন মণ্ডলী অনিবার্যভাবে রাজনৈতিক দর্শন বা দল এমনকি সরকারের কঠোর সমালোচনা করতে বাধ্য হয়। এমন দিন দূরে নয়, যখন খ্রিস্টভক্তগণ রাজনৈতিক জীবনকে এমনভাবে Evangelize করবে যে, মণ্ডলীকে তার সর্বশেষ অবস্থানে যেতেই হবে না।

Leave a Reply