টেকসই উন্নয়ন
টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে মানবজাতির উন্নয়নের উদ্দেশ্যে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন, একইসাথে প্রাকৃতিক নিয়মের সুরক্ষা বিধানের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদের সরবরাহ ও বাস্তুসংস্থান নীতি চলমান রাখা যার উপর অর্থনীতি ও সমাজ নির্ভর করে। টেকসই উন্নয়নের প্রত্যাশিত ফল হচ্ছে এমন একটা সমাজ, যেখানে মানুষের চাহিদা মেটাতে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহৃত হয় কিন্তু অতিব্যবহার বা ধ্বংস হয়না। টেকসই উন্নয়ন বলতে এমন ধরণের উন্নয়নকে বোঝানো হয়, যা বর্তমান চাহিদাগুলোকে পূরণ করে কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রাপ্য সম্পদ ও ব্যক্তি-সক্ষমতাকে বিনষ্ট করেনা।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা/Sustainable Development Goals (SDG) হলো ভবিষ্যতের স্বপ্ন- আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সাধনের জন্য একগুচ্ছ লক্ষ্যমাত্রা। ২৫-২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ তারিখে এ বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানগণ ২০১৬-২০৩০ সময়কালের জন্য নিম্নেলিখিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ নির্ধারণ করেছেন:
দারিদ্র্য বিমোচন … সর্বত্র সব ধরনের দারিদ্র্য নির্মূল করা।
ক্ষুধা মুক্তি … ক্ষুধা মুক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টির লক্ষ্য অর্জন ও টেকসই কৃষি ব্যবস্থা চালু।
সুস্বাস্থ্য … স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা ও সব বয়সের সবার কল্যাণে কাজ করা।
মানসম্মত শিক্ষা … অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতা-ভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং সবার জন্য আজীবন শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা।
নারী-পুরুষ সমতা … নারী-পুরুষ সমতা অর্জন এবং সব নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন করা।
সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা … সবার জন্য পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের সহজপ্রাপ্যতা ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
নবায়নযোগ্য ও ব্যয়সাধ্য জ্বালানী … সবার জন্য ব্যয়সাধ্য, টেকসই ও আধুনিক জ্বালানী সুবিধা নিশ্চিত করা।
কর্মসংস্থান ও অর্থনীতি … সবার জন্য দীর্ঘমেয়াদী, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পূর্ণাঙ্গ ও উৎপাদনশীল ও উপযুক্ত কাজের সুবিধা নিশ্চিত করা।
উদ্ভাবন ও উন্নত অবকাঠামো … দীর্ঘস্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শিল্পায়ন করা এবং উদ্ভাবন উৎসাহিত করা।
বৈষম্য হ্রাস … দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় বৈষম্য হ্রাস করা।
টেকসই নগর ও সম্প্রদায় … নগর ও মানব বসতিগুলোকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই করে তোলা।
সম্পদের দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহার … টেকসই ভোগ ও উৎপাদন রীতি নিশ্চিত করা।
জলবায়ু বিষয়ে পদক্ষেপ … জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
টেকসই মহাসাগর … টেকসই উন্নয়নের জন্য মহাসাগর, সাগর ও সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ ও সেগুলোর টেকসই ব্যবহার করা।
ভূমির টেকসই ব্যবহার … পৃথিবীর ইকোসিস্টেমের সুরক্ষা, পুনর্বহাল ও টেকসই ব্যবহার করা, টেকসইভাবে বন ব্যবস্থাপনা, মরুকরণ রোধ, ভূমিক্ষয় রোধ ও বন্ধ করা এবং জীববৈচিত্রের ক্ষতি রোধ করা।
শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান … টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ তৈরি করা, সবার জন্য ন্যায়বিচারের সুযোগ প্রদান করা, এবং সবস্তরে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।
টেকসই উন্নয়নের জন্য অংশীদারিত্ব … বাস্তবায়নের উপায়গুলো জোরদার করা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব পুনর্জীবিত করা।
মানসম্মত শিক্ষা
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’র চতুর্থ লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা। মানসম্মত শিক্ষা হচ্ছে সেই ধরণের শিক্ষা, যা সকল শিক্ষার্থীকে অর্থনৈতিকভাবে উৎপাদনশীল, টেকসই জীবিকা গ্রহণ, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাজে অংশগ্রহণ এবং জীবনমান উন্নয়নে সক্ষমতা দান করে। ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতায় বিভিন্ন ধরণের পাঠ্যক্রম থাকতেই পারে, তথাপি প্রাথমিক শিক্ষা শেষে সকল শিক্ষার্থী যেন সাক্ষরতা, প্রাথমিক গাণিতিক দক্ষতা, প্রাথমিক বৈজ্ঞানিক ধারণা এবং জীবন দক্ষতা বিশেষভাবে বিভিন্ন রোগব্যাধি বিষয়ে সচেতনতা ও প্রতিরোধ বিষয়ে সক্ষমতা লাভ করে। মানসম্মত শিক্ষা’র এই সামগ্রিক প্রক্রিয়ায়, শিক্ষক ও অন্যান্য অংশীদারদের মানন্নোয়নে সক্ষমতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বর্তমানে টেকসই উন্নয়নের জন্য মানসম্মত শিক্ষাকে প্রয়োজনীয় নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০০২ খ্রিস্টাব্দে জোয়ানেসবার্গে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের বিশ্ব সম্মেলনে প্রথমবার মানসম্মত শিক্ষা বিষয়টি প্রাণিধান পায় ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার পুনরভিযোজন গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত হয়। মানসম্মত শিক্ষার পরবর্তী ধাপটি হচ্ছে “Education for Sustainable Development (ESD)” । টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা (ইএসডি), যার লক্ষ্য হচ্ছে টেকসই বিশ্বের জন্য নতুন মূল্যবোধ, বোঝাপড়া, জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জনকে আমাদের কর্মে একীভূতকরণ।
মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণের মাত্রা সমূহ
শিক্ষা মানুষের ক্ষমতায়ন করে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সমাজকে নিজ অবস্থা ও পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা দান করে। সমাজে বিদ্যমান দারিদ্র এবং অসমতার বিরুদ্ধে যুদ্ধে মানসম্মত শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণের মাত্রাসমূহ নিম্নরূপ:
সমতা: শিক্ষায় সমতা অর্থ হচ্ছে, নারী-পুরুষ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি ব্যক্তিগত ও সামাজিক অবস্থা শিক্ষার্জনের পথে কোন বাধা নয়। বরং ‘সকল শিক্ষার্থী’ই যেন নুন্যতম দক্ষতা অর্জনে সক্ষম হয়।
প্রসঙ্গ ও প্রাসঙ্গিকতা: কোন ব্লু প্রিন্টের উপর ভিত্তি করে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। একটি দেশ এবং সমাজের প্রকৃত প্রয়োজনগুলো কি, তার উপরে ভিত্তি করেই আসে সমাধান এবং অভিযোজন।
শিশু বান্ধব শিক্ষণ ও শিখন: মানসম্মত শিক্ষায় শিশু থাকে কেন্দ্রবিন্দুতে এবং এই ব্যবস্থা তাকে তার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা সমূহ আবিষ্কার করতে সাহায্য করে।
স্থায়ীত্ব: শিক্ষা প্রক্রিয়ায় কোন পরিবর্তন আসলে তা বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয়। তাই প্রক্রিয়াগত পরিবর্তন সমূহের স্থায়ীত্ব জরুরী বিষয়।
সুষম পদ্ধতি: মানসম্মত শিক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে শিশুদের অর্থনৈতিকভাবে উৎপাদনশীল, টেকসই জীবিকা গ্রহণ, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাজে অংশগ্রহণ এবং জীবনমান উন্নয়নে সক্ষম করে তোলা।
শিক্ষার ফলাফল: শিক্ষা জীবনের একটি নির্দিষ্ট ধাপ শেষে শিশুকে কিছু নির্দিষ্ট দক্ষতা অর্জন করতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা হলো ফলাফল ভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতি।
টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা (ইএসডি)
সকল পর্যায়ের এবং সকল ধরণের শিক্ষা সকল বয়সী মানুষকে সাহায্য করবে, যেন তারা যে বিশ্বে বসবাস করছে সে বিশ্ব, সে বিশ্বের জটিলতা, বিভিন্ন সমস্যাবলী যেমন: দারিদ্র, অতি ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ, শহুরে অধপতন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নারী-পুরুষ বৈষম্য, স্বাস্থ্য, দ্বন্দ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ইদ্যাদির আন্তঃসম্পর্কগুলো বুঝতে সক্ষম হয়।
টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষার দর্শনে, টেকসই বিশ্ব গঠনে ব্যক্তির জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়নে সামগ্রিক আন্তঃসম্পর্কীয় প্রক্রিয়ার উপরে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা উভয়ই বিবেচ্য। ইএসডি মানুষকে টেকসই উন্নয়নের জ্ঞান ও দক্ষতা দান করবে; যা তাদের অধিকতর উপযুক্ত ও আত্মবিশ্বাসী করবে; প্রকৃতি, সামাজিক মূল্যবোধ, নারী-পুরুষ সমতা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সাথে সম্প্রীতি রক্ষা করে সুস্থ ও উৎপাদনশীল জীবন যাপনে ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা তৈরী করবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা বিষয়ে শুধু সচেতনতা দান, তথ্য ও জ্ঞান সরবরাহ করাই যথেষ্ট নয়; বরং মূল্যবোধ সৃষ্টি করা আরো জরুরী, প্রয়োজন বোঝাপড়া ও প্রত্যয়।
“টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা প্রকৃতি ও উদ্দেশ্যগতভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চলমান; এর দাবী হচ্ছে আমরা যেন অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেই এবং ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই ভবিষ্যত বিনির্মাণে কাজ করি। এর দ্বারা বোঝায় যে, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত উন্নয়ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তাই অবশ্যই একইসাথে এগুলো বিবেচনা করতে হবে। স্থানীয় পারিপার্শ্বিকতায় ভিত্তিমূল হলেও টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষায় বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি একীভূতিকরণ প্রয়োজন, যা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, মানুষ এবং ব্যবস্থার পারস্পারিক সম্পর্ককে স্বীকৃতি দান করে। এর মূলকথা হলো বিশ্বে বিদ্যমান পারস্পরিক নির্ভরতা ও পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ে অধিকতর বোঝাপড়া এবং এই নির্ভরতা ও সম্পর্ককে দারিদ্র, প্রাকৃতিক সম্পদের অতি ব্যবহার, পরিবেশ বিপর্যয়, শহুরে অধঃপতন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নারী-পুরুষ বৈষম্য, স্বাস্থ্য, দ্বন্দ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা।” (ইউনেস্কো, ২০০২:১০)
“টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা হচ্ছে শিক্ষা’র একটি নতুন ধারা যেখানে রূপান্তরমুখী শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ আছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে সকল বয়সী মানুষকে টেকসই ভবিষ্যত বিনির্মাণে দায়িত্বগ্রহণে ক্ষমতায়ন করা। (ইউনেস্কো, ২০০২:৭) এর মূল উপাদান হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা, নীতি এবং অভ্যাসকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে রূপান্তরিত করা, যাতে করে শিক্ষার্থীগণ টেকসই উন্নয়নের বিভিন্ন ইস্যুতে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে এমন কাজ করতে সক্ষমতা অর্জন করে যা সাংস্কৃতিকভাবে সঠিক এবং স্থানীয়ভাবে প্রাসঙ্গিক।” (ইউনেস্কো, ২০০২:১০)
টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষায় বিবেচ্য বিষয়
টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা পদ্ধতি এমনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের সামাজিক অসুস্থতা বা সমস্যা আবিষ্কার, গবেষণা ও সমাধান করতে শিক্ষার্থীরা উৎসাহিত হয়। বিদ্যমান এমন কিছু সামাজিক অসুস্থতা বা সমস্যা বা প্রয়োজন সম্পর্কে দৃষ্টি নিবদ্ধ করার মানসে নিম্নে কিছু ক্ষেত্র উল্লেখ করা হলো:
দারিদ্র দূরীকরণ
নাগরিক অধিকার
শান্তি
পরিবেশ সুরক্ষা
গোষ্ঠীগত ও জাতিগত বৈচিত্র্য
নৈতিক অবক্ষয়
স্থানীয় ও বৈশ্বিক প্রসঙ্গে দায়িত্বগ্রহণ
গণতন্ত্র ও সুশাসন
ন্যায্যতা, নিরাপত্তা
মানবাধিকার
স্বাস্থ্য
নারী-পুরুষ সমতা
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য
উৎপাদন এবং ব্যবহার ব্যবস্থা
সম্মিলিত দায়িত্বগ্রহণ
প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা
পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত বিষয়
টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা (ইএসডি) বিষয়ে আলোচনায় আমরা প্রায়শঃ ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত আরো দু’টো বিষয়কে মিলিয়ে ফেলি। নিম্নে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত এ’তিনটি বিষয়ের সাথে পরিচয় করানোর অবকাশ নিচ্ছি।
- Development Education (DE)
- Education for Sustainable Development (ESD)
- Environmental Education (EE)
প্রায়শঃ অন্য দু’টো বিষয়ে কিছু কাজ করে আমরা ধারণা করে বসি আমরা ইএসডি বাস্তবায়নে অনেকটা পথ এগিয়ে গিয়েছি। প্রকৃতপক্ষে, এই তিনটি বিষয় উন্নয়নের তিনটি ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। টেকসই উন্নয়নের জন্য এই তিনটি বিষয়েই মনযোগী হওয়া আবশ্যক এবং এগুলোকে একসাথে দেখলেই আমরা বুঝবো মানসম্মত শিক্ষা অর্জনের জন্য এই তিনটিকে সমন্বিত করে অগ্রসর হওয়ার কর্মপন্থাই উত্তম।
টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা (ইএসডি) ও বাংলাদেশ
বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন শিক্ষা (ESD) বিষয়ে কাজ শুরু করতে গিয়ে প্রকৃতপক্ষে কিছু কাজ হয়েছে পরিবেশগত শিক্ষা (EE) বিষয়ে। তাই আরো অনেক সামাজিক ইস্যু যেমন: সামাজিক ন্যায্যতা, সমতা, জবাবদিহিতা এবং অন্যান্য আর্থসামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমাদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে কোন পদক্ষেপ শিক্ষা ব্যবস্থায় রাখা হয়নি। বলা হয়েছে ESD কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তভর্‚ক্ত করা হয়েছে পরিবেশগত শিক্ষা (EE) । শুধুমাত্র এই বিষয়ে মনযোগ আমাদের দেশের আপামর জনগণের কাছে ESD কে ভুলভাবে শুধুমাত্র একটি উপাদান অর্থাৎ পরিবেশগত শিক্ষাকেই পরিচিত করিয়েছে। ফলশ্রুতিতে, আমরা টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা’র মূল উদ্দেশ্য থেকে অনেক দূরে পড়ে আছি। বিশেষভাবে, আমাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘পরিবেশ শিক্ষা’ নামক পাঠ সংযুক্ত করা হয়েছে পরিবেশগত শিক্ষা দানের জন্য। পরিবেশ বিজ্ঞান এবং এর ব্যবস্থাপনা শিক্ষা দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের। একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, পরিবেশ শিক্ষা ব্যতীত ESD সংশ্লিষ্ট বহু বিষয় বাংলাদেশ তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে পাঠদানের জন্য অন্তর্ভূক্ত করেনি। অপরদিকে, উন্নত দেশগুলো ২০০২ খ্রিস্টাব্দে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত বিশ্ব সম্মেলনের পর থেকে দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষা যাত্রায় হয় ESD মুখী শিক্ষা নতুন করে চালু করেছে অথবা জাতীয় পাঠ্যক্রমকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেছে।
বাংলাদেশের শিক্ষা বিষয়ক উদ্দেশ্য প্রণয়নের সময়ে টেকসই উন্নয়নের মৌলিক নীতিসমূহকে সংহত করা হয়নি। ESD’র চারটি উন্নয়ন এজেণ্ডা হলো: রাষ্ট্রীয় নীতি, পাঠ্যক্রম, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী। ফলে, এ’চারটি ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত সীমাবদ্ধতাসমূহ বিদ্যমান:
আমাদের বিভিন্ন ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করা কঠিন। শিক্ষার ভবিষ্যত নির্ধারণে প্রণীত রাষ্ট্রীয় নীতি বাস্তবায়নের জন্য সঠিক মাধ্যম এবং যথেষ্ট লোকবল, দু’টোরই স্বল্পতা বিদ্যমান।
শিক্ষা’র ক্ষেত্রে আমাদের সকল মনযোগ হচ্ছে ‘পাশ’ করা, ভাল ‘পয়েন্ট’ পাওয়া। পেশাগত জীবনের জন্য মানসিক প্রজ্ঞা (যেমন: নৈতিকতা, সততা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ইত্যাদি) অর্জনে শিক্ষণ-শিখন বিষয়ে আমাদের শিক্ষা নীতি, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবকগণের কোন মনযোগ নেই। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে যে অবাস্তব শিক্ষা ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া হয়, যা ভবিষ্যত জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় অথবা শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য পূরণ করেনা। বাংলাদেশের শিক্ষণ ব্যবস্থা মুখস্ত-বিদ্যা নির্ভর, যা সমস্যা সমাধানে মেধা ব্যবহারকে তো উৎসাহিত করেই না, অধিকন্তু ছাত্রদের সৃষ্টিশীলতা ভোঁতা করে ফেলে।
বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষক ও শিক্ষা বিষয়ক প্রশাসনিক ব্যক্তি নিয়োগের সাধারণ যোগ্যতা কি এবং নিয়োগ প্রক্রিয়াও বা কি তা বোঝা কঠিন। এইভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের মাধ্যমে যে শিক্ষণ ব্যবস্থা বিদ্যমান, তা টেকসই উন্নয়নের পথে কোন সন্তোষজনক ফলাফল আনতে পারছে না।
বর্তমান শিক্ষণ ব্যবস্থায় ছাত্রের স্বতন্ত্র গুনাগুন, দক্ষতা বা মানসিক প্রজ্ঞা কি তা যাচাইয়ের কোন পদ্ধতি নেই, যেগুলো প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক কর্ম-বাজারে সুবিধা পাওয়ার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের জরুরীভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন যে, বিদ্যমান শিক্ষা প্রক্রিয়ায় ESD বাস্তবায়নে ‘সংহত পাঠ্যক্রম’ গ্রহণ করাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে কি না! এসডিজি চাহিদার আলোকে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বকীয় কৌশলগত পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। এই সংহত পদ্ধতিতে দেশের টেকসই উন্নয়নের অবদান রাখার জন্য একটি দর্শন থাকবে।
প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ESD বাস্তবায়ন কর্মকৌশল, প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টিশীল দর্শনের মাধ্যমে জাতীয় নীতি গ্রহণকে সহায়তা ও শক্তিশালী করতে পারে। অধিকন্তু, মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে ভবিষ্যত শিক্ষণ পদ্ধতিতে ESD’র কিছু আদর্শিক বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে, যেমন: ক) মূল্যবোধ, বোঝাপড়া ও উন্নয়ন পদ্ধতি’র সহভাগিতা করা, যেগুলো টেকসই উন্নয়নকে শক্তিশালী করে; খ) কারণ অনুসন্ধান ও সমালোচনা, সমস্যা সমাধান, শিল্প গবেষণা ও সহভাগিতাকে উৎসাহিতকরণ, যেগুলো টেকসই উন্নয়নের পথে বাধাসমূহ অতিক্রমে আত্মবিশ্বাস দান করে; গ) বিভিন্ন ধরণের শিক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার, যেন কোন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যায় তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি হয়; ঘ) শিক্ষা কর্মসূচী বিষয়ক পরিকল্পনা প্রণয়নে শিক্ষার্থীগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ; ঙ) ভবিষ্যত নিয়ে ভাবনা: স্বল্প মেয়াদ, মধ্য মেয়াদ ও দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষা ব্যবস্থা যেন অর্থপূর্ণ হয়।
টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষায় যুব সম্পৃক্ততা
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিদ্যমান কাঠামোতে এমন ব্যবস্থা নেই যা অনুসরণ করে শিক্ষার্থীগণ বিভিন্ন ইস্যুতে লব্ধ জ্ঞান ও মেধা ব্যবহার করে ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করে সৃষ্টিশীল সমাধানে উন্নীত হতে পারে। এ’ক্ষেত্রে দেশের যুব সমাজ টেকসই উন্নয়নের উদ্দেশ্যে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষায় সম্পৃক্ত হতে পারে।
যুব সম্পৃক্ততার ক্ষেত্র সমূহ:
যুবরা তিনটি মূল বিভাগে নিম্নোক্ত ইস্যু সমূহে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও গঠন কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে, যা টেকসই উন্নয়নের পথে যাত্রায় বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী করবে।
- পরিবেশ: উৎপাদন এবং ব্যবহার ব্যবস্থা, সম্মিলিত দায়িত্বগ্রহণ, পরিবেশ সুরক্ষা, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, গোষ্ঠীগত ও জাতিগত বৈচিত্র্য।
- সমাজ/ অর্থনীতি/ সংস্কৃতি: দারিদ্র দূরীকরণ, নাগরিক অধিকার, শান্তি, নৈতিক অবক্ষয়, ন্যায্যতা, নিরাপত্তা, মানবাধিকার, সমতা, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য।
- উন্নয়ন শিক্ষা (DE): বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে দায়বদ্ধতা, ন্যায্য ও সমতা ভিত্তিক বিশ্ব গঠনে ব্যক্তি সম্ভাবনা, তৃতীয় বিশ্বের জন্য সম্ভাব্য উন্নয়ন ইস্যু, স্থানীয় পর্যায়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও কর্মসমূহের বৈশ্বিক প্রভাব এবং পারস্পরিক সম্পর্ক ও নির্ভরতা।
ইস্যুভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণের পদ্ধতি:
ইস্যু ভিত্তিক সমস্যা সমাধানে নিম্নোক্ত ধাপসমূহ থাকা প্রয়োজন:
- ইস্যু চিহ্নিতকরণ: সমস্যাটি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা লাভ, একই ইস্যুতে বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে।
পারস্পরিক স্বার্থ সম্পর্কে বোঝাপড়া: সমস্যা সমাধানের গুরুত্বপূর্ণ এই ধাপটি প্রায়শঃ বাদ থেকে যায়। একটি ইস্যুতে আমার যা স্বার্থ, তা অন্যের স্বার্থের বিপরীতও হতে পারে, ব্যাপক জনগোষ্ঠীর জন্য মঙ্গলজনক স্বার্থ কি তা চিহ্নিত করা। - লব্ধ জ্ঞান ও মেধা ব্যবহার করে কারণ অনুসন্ধান: প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় আমাদের লব্ধ জ্ঞান ব্যবহার করে, নৈতিকতা, ধর্মীয় বিশ্বাস, সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় নীতি ইত্যাদি দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করে নির্দিষ্ট ইস্যু বা সমস্যা সংগঠনের কারণ কি, সেই সম্পর্কে আলোচনা ও বিশ্লেষণ করা।
- সম্ভাব্য সমাধানের প্রস্তাবনা: সমাধানের অনেক পথ থাকতে পারে, প্রতিটি সমাধানে থাকতে পারে অনেক ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক, মেধা খাটিয়ে সম্ভাব্য সমাধান ও তার ইতিবাচক-নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা ও তালিকা প্রণয়ন করা।
- সর্বোত্তম সমাধান চিহ্নিতকরণ: প্রস্তাবিত সমাধান সমূহের ইতিবাচক-নেতিবাচক প্রভাব বিশ্লেষণ করে এক বা একাধিক সর্বোত্তম সমাধান চিহ্নিতকরণ।
- নথিবদ্ধকরণ: সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি নথিবদ্ধকরণ, স্মরণশক্তির উপরে নির্ভর না করা!
- বিকল্প পদ্ধতি, পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন: সমাধান কৌশলে গৃহীত সিদ্ধান্ত সার্বিক পরিস্থিতিতে অনুক‚ল না হলে বিকল্প পদ্ধতি কি হবে, কিভাবে সামগ্রিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করা হবে, মূল্যায়ন নির্দেশক কি হবে?- ইত্যাদি বিষয় সুস্পষ্ট করা।
বিদ্যমান সম্পদ:
বাংলাদেশে কাথলিক যুব জনগোষ্ঠী স্কুল পর্যায়ে ওয়াইসিএস এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিসিএসএম আন্দোলনের সাথে যুক্ত। উভয় আন্দোলন নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে জীবনকে পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে সমাজ রূপান্তরের স্বপ্নে গঠিত। আর বিদ্যমান এই প্রক্রিয়াই হচ্ছে টেকসই উন্নয়নের পথে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা অভিযাত্রা। উভয় আন্দোলনে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, তা হচ্ছে: See-Judge-Act (দেখা-বিশ্লেষণ করা-কাজ করা)। বিসিএসএম আন্দোলনে উপরোক্ত পদ্ধতি ব্যবহারে নিম্নোক্ত ধাপে জীবনের পুনর্মূল্যায়ন (Review of Life) সংগঠিত হয়।
- বাস্তবতা অভিজ্ঞতা- Experience of Reality
- সমাজ বিশ্লেষণ- Social Analysis
- বিশ্বাসপূর্ণ (বাইবেলীয় বা ঐশতাত্ত্বিক) অনুধ্যান- Faith Reflection
- কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ (নিজেদের বা সমাজের জন্য)- Action Plan
- মূল্যায়ন- Evaluation
বিসিএসএম কর্তৃক ব্যবহৃত পদ্ধতি এবং ইতোপূর্বে বর্ণিত ইস্যুভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণের পদ্ধতি একই সূত্রে গাঁথা। উভয়ই ঘটনার কার্যকারণ আবিষ্কার, স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা, সম্ভাব্য সমাধান ইত্যাদি বিষয়ে মস্তিষ্ক শ্রমের মাধ্যমে সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত গ্রহণের শিক্ষাদান করে। ওয়াইসিএস ও বিসিএসএম আন্দোলনের বিদ্যমান এই প্রক্রিয়া কাথলিক যুব জনগোষ্ঠীর অনন্য সম্পদ।
তথাপি, স্বীকার্য যে বিদ্যমান অধিকাংশ ওয়াইসিএস ও বিসিএসএম সেল বা ইউনিটে See-Judge-Act (দেখা-বিশ্লেষণ করা-কাজ করা) পদ্ধতি সঠিকভাবে ব্যবহার বা অনুসরণ করা হয়না। গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রভাবে মেধা ব্যবহার করে ঘটনার গভীর বিশ্লেষণে অভ্যস্ত না হওয়ায় প্রক্রিয়াটি জটিল ও প্রাণহীন মনে করে যুবরা সযত্নে এড়িয়ে যায় ও গতানুগতিক দিবস পালন, সেমিনার-কর্মশালা আয়োজন, দাতব্য কার্যাবলী, ইত্যাদিতে সম্পৃক্ত হতে বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।
ভবিষ্যত সম্ভাবনা:
দেশের মূলধারার জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত না করে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই কাথলিক যুব গোষ্ঠীর হাতে যে সম্পদ বিদ্যমান, সেই জীবনের পুনর্মূল্যায়ন (Review of Life) পদ্ধতি মূলধারার যুব সমাজের সাথে সহভাগিতা করার সময় এসে পড়েছে বলে আমি মনে করি। স্কুল পর্যায়ে ওয়াইএসএম নামে ওয়াইসিএস’র অনুরূপ একটি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে বহু বছর আগে। কিছু কিছু কাজও শুরু হয়েছিল, তথাপি তেমন ব্যাপকভাবে পরিচিত হতে পারেনি। ওয়াইএসএম আন্দোলনকে নতুন করে গতিশীল করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের তৎপরতা কাম্য। বিসিএসএম এর মত একই কর্মপদ্ধতি ব্যবহার করে মূল ধারার যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করতে কোন আন্দোলন এ’যাবত চোখে পড়েনি। কাথলিক যুবক-যুবতী, যারা বিসিএসএম আন্দোলনের সাথে যুক্ত, তাদের এই ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার অবকাশ আছে বলে মনে হচ্ছে। তথাপি, শিক্ষণের পূর্বে শিখন প্রয়োজন। তাই কাথলিক যুব জনগোষ্ঠীর জীবনের পুনর্মূল্যায়ন (Review of Life) পদ্ধতি সম্পর্কে আরো জানবে, অনুশীলন করবে ও মূলধারার যুব সমাজের সাথে তা সহভাগিতা করবে; এমন স্বপ্ন দেখাটা অতিরঞ্জিত নয় বলে আশা করি।
শেষ কথা
ESD বিভিন্ন ধরণের শিক্ষা কৌশলকে সমন্বিত করে, জীবন কিভাবে একে অপরের সাথে সম্পর্কিত এবং জীবমণ্ডলের উপরে নির্ভরশীল এবং আমাদের বর্তমান যথেচ্ছ জীবন-যাপন সামগ্রিক জীবনযাত্রার মানকে কিভাবে বিপন্ন করছে, বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক বিপর্যয়, সামাজিক ন্যায়বিচার ও পরিপূর্ণতার অভাব নিয়ে গবেষণা করে। শিক্ষার্থীরা যদি এই পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত ইস্যুগুলো বুঝতে চায়, অবশ্যই সেগুলোকে একত্রিতভাবে বিবেচনা করতে হবে। ESD আমাদের মানবিক দ্বিধাদ্বন্দকে নিয়ে আলোচনা করে: আমাদের সকলকে উত্তমভাবে প্রতিপালন করতে পৃথিবীর যে সক্ষমতা, তা বিনষ্ট না করেই কিভাবে আমরা উত্তমরূপে বেঁচে থাকতে পারি; এই পদ্ধতি মানুষের জীবন, এতে অন্তর্ভূক্ত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পদ্ধতি, এবং জীবমণ্ডল হতে ক্রমাগত পণ্য ও পরিসেবা গ্রহণ বিষয়সমূহকে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত রাখে। বিভিন্ন পর্যায়ের বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকগণ এখানে অনেক মূল্যবোধ সম্পদ পেতে পারেন এবং শিক্ষার্থীরা ESD কে আকর্ষনীয়, প্রেরণাদায়ক ও জীবন সহায়ক হিসেবে মনে করবে, কারণ এর সাথে সকলে খুঁজে পাবে বিশ্ব এবং নিজেদের ভবিষ্যত জীবনের সম্পর্ক ও প্রাসঙ্গিকতা।
——————
তথ্যসূত্র:
- ‘Education for Sustainable Development’ by Polin Kumar Saha, The Independent, 26 March 2018.
- bn.wikipedia.org
- ‘Education for Sustainable Development’ by Valerie Duffy, National Youth Council of Ireland.
- www.ecounesco.ie
- www.youthdeved.ie